যেনাকারী কি জান্নাতে যাবে - যেনা করলে তা থেকে মাফ পাওয়ার কোন উপায় আছে
যিনা কাকে বলে যেনাকারী কি জান্নাতে যাবে যেনা করলে তা থেকে মাফ পাওয়ার কোন উপায় আছে কিনা যিনা মাফের দোয়াগোপনে যেনা করলে তিনটি বিপদ আসবেই সেগুলো কি তা জানতে পুরো পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়ে ফেলুন।
যিনা কাকে বলে
যিনা বা জেনা হলো কোনো অবিবাহিত দুইজন মানুষ ( নারী ও পুরুষ) যদি বিবাহ বন্ধন ছাড়া যৌন মিলন করে তাহলে সেটাকে যিনা বলা হয়। অথবা কোনো বিবাহিত নারীর সাথে বা পুরুষের সাথে অন্য কোনো নারী বা পুরুষ যৌন মিলন করে তাহলে সেটাকেও জিনা বলা হয়। এবং জিনা অনেক কয় প্রকারের হয়ে থাকে নিচে জেনে নিন যিনা কত প্রকার ও কি কি?
যিনা কত প্রকার ও কি কি
ইসলামে জিনা একটি হারাম কাজ এবং জিনা অত্যন্ত পাপের কাজ। জিনা করলে আপনাকে দুনিয়াতেই এর তিনটি শাস্তি ভোগ করতে হতে পারে। তাই জিনা সম্পর্কে আমাদের সকলের জানতে হবে কারণ যিনা অনেক প্রকারের হয়ে থাকে। জিনা কত প্রকার ও কি কি একনজরে দেখে নিন।
ব্যাভিচার: দুইজন অবিবাহিত নারী পুরুষ উভয়ের সম্মতিতে যদি যৌন মিলন করে তাহলে সেটাকে বলা হয় ব্যাভিচার।
পরকীয়া: দুইজনের সম্মতিতে অন্য কোনো বিবাহিত নারী অথবা পুরুষের সাথে যদি যৌন সঙ্গম করে তাহলে সেটাকে বলা হয় পরকীয়া।
সমকামিতা: সমকামিতাও একটি যিনা একই লিঙ্গের ব্যক্তির সাথে যদি যৌন মিলন করা হয় তাহলে সেটাকে সমকামিতা বলে।
আরো পড়ুন: দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির ইসলামিক উপায় - দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির দোয়া
পতিতাবৃত্তি: অর্থের বিনিময়ে কোনো নারী বা পুরুষ যদি যৌন সঙ্গম করে তাহলে সেটাও যিনার মধ্যে পড়ে।
পশুকামিতা: যদি কোনো পশুর সাথে যৌন সঙ্গম করা হয় তাহলে সেটাও যিনা। আর এই যিনার শাস্তি অনেক ভয়াবহ হবে।
সাডোমি: সাডোমি হলো কোনো পুরুষ যদি কোনো নারীর পায়ুপথে লিঙ্গ প্রবেশ করাই তাহলে সেটাকে সাডোমি বলা হয়।
ধর্ষণ: জোরপূর্বক কোনো অবিবাহিত নারীর সাথে যৌন সঙ্গম করলে সেটাকে বলা হয় ধর্ষণ। আর ধর্ষণ অনেক খারাপ একটি যিনা এই জিনা করার জন্য পেতে হবে অনেক শাস্তি।
চোখের জিনা: কোনো খারাপ মনোভাব নিয়ে যদি কোনো নারীর দিকে তাকান বা কোনো খারাপ কিছুর দিকে তাকান তাহলে সেটা চোখের জিনা।
অন্তরের জিনা: যদি কোনো কিছু নিয়ে অথবা কোনো মানুষকে নিয়ে মনে মনে খারাপ চিন্তা করেন তাহলে সেটাও জিনার মধ্যে পড়ে।
যেনাকারী কি জান্নাতে যাবে
যেনাকারী কি জান্নাতে যাবে এই বিষয়ে যদি সঠিক তথ্য পেতে চান তাহলে এই অংশে থেকে জেনে নিতে পারেন। যেনা অত্যন্ত একটি পাপ কাজ এবং জেনা করা কবিরা গুনাহ আর যে ব্যক্তি কবিরা গুনাহ করবে তার জন্য জাহান্নাম নির্ধারিত।
তবে কোনো ব্যক্তি যদি যিনা করার পরে তার ভুল বুঝতে পারে এবং আন্তরিকতার সাথে মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে পারে তাহলে যেনা করার গুনা মাফ পাবে এবং পরবর্তীতে যদি আর কোন পাপ কাজ না করে এবং আল্লাহর পথে থেকে ঈমান আমল বৃদ্ধি করতে পারে তাহলে অবশ্যই সেই ব্যক্তি জান্নাতে যাবে। তাহলে আশা করছি বুঝতে পারলেন যেনাকারী কি জান্নাতে যাবে কিনা।
যেনা করলে তা থেকে মাফ পাওয়ার কোন উপায় আছে
যেনা করলে তা থেকে মাফ পাওয়ার কোন উপায় আছে কিনা অনেকে জানতে চেয়ে থাকেন। যিনা একটি জঘন্যতম পাপ কাজ এবং কবিরা গুনাহর কাজ। বর্তমানে অনেক ছেলে মেয়ে যৌবনের তাড়নায় যিনা করে ফেলে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে ওয়া লা তাকরাবুয যিনা অর্থ্যাৎ তোমরা জিনার ধারে কাছেও যেও না।
তবে কেউ যদি যৌবনের তাড়নায় পড়ে যিনা করে ফেলে এবং পরবর্তীতে ভুল বুঝতে পারে তাহলে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। এবং সেটা একাত্মতা এবং আন্তরিকতার সাথে করতে হবে আর ওয়াদা করতে হবে এমন কোনো কাজ আর কখনো করবো না।
আরো পড়ুন: মসজিদে ঢোকার দোয়া - মসজিদ থেকে বের হওয়ার দোয়া
এই বলে অন্তর থেকে গভীরভাবে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইলে মহান আল্লাহ অবশ্যই যিনার গুনাহ মাফ করবেন। গুনাহ মাফ চাওয়ার পরে আল্লাহর এবাদতে মসগুল থাকতে হবে এবং কোনো পাপ কাজ করা যাবে না। যিনা করলে আল্লাহর কাছে গভীরভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করাই একমাত্র মাফ পাওয়ার উপায়।
যিনা মাফের দোয়া
যিনা একটি জঘন্যতম পাপ কাজ যার শাস্তি অনেক ভয়াবহ পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে তোমরা যিনার ধারে কাছেও যেও না। তবে কেউ যদি যিনা করার পর ভুল বুঝতে পারে ও অনুতপ্ত হয় তাহলে সেই ব্যক্তি আল্লাহর কাছে দোয়া করে ও ক্ষমা চাই তাহলে আল্লাহ নিশ্চয় মাফ করবেন। যিনা মাফের দোয়াটি হলো:
আরবি: اللهما إني أوجوبيكا من شري سميع ومن شري بساري ومن شري لساني ومن شري قلبي ومن شري مانيي
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নী আঊযুবিকা মিন শাররী সামঈ ওয়া মিন শাররি বাসারী ওয়া মিন শাররি লিসানী ওয়া মিন শাররি ক্বালবী ওয়া মিন শাররি মানিইয়ী।
অর্থ: হে মহান আল্লাহ আমি আপনার কাছে মন্দ কিছু শোনা থেকে, মন্দ কিছু দেখা থেকে, মন্দ কিছু বলা থেকে, মন্দ কিছু করা থেকে আশ্রয় চাই। আমার দৈহিক কামনা এবং আমার অন্তরের খারাপ কামনা বাসনা থেকে। (তিরমিজি ৩৪৯২, আবু দাউদ ১৫৫১)
গোপনে যেনা করলে তিনটি বিপদ আসবেই
যেনাকারী কি জান্নাতে যাবে এবং যেনা করলে তা থেকে মাফ পাওয়ার কোন উপায় আছে কিনা এই গুলো বিষয়ে জানতে পেরেছেন কিন্তু আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেটা জানলে যিনা করার আগে একবার হলেও মনে পড়বে এই কথা গুলো। কেউ যদি যিনা করে তাহলে দুনিয়াতেই সেই ব্যক্তি তিনটি শাস্তি পাবে। আমরা অনেকেই যৌবনের তাড়নায় পড়ে জঘন্যতম পাপ কাজ যিনা করে ফেলি কেউ যদি গোপনে যিনা করে তাহলে এই তিনটি শাস্তি দুনিয়াতেই পাবে।
১। গোপনে যিনাকারিকে মহান আল্লাহ আস্তে আস্তে একেবারে দরিদ্র করে দিবেন। যত ধন সম্পদ ছিলো সব আস্তে আস্তে ধ্বংস করে দিবেন। কামাই রোজগারে কোনো বরকত থাকবে না এতে করে জীবন আস্তে আস্তে দুর্বিষহ হয়ে পড়বে ।
আরো পড়ুন: ঘুমানোর দোয়া বাংলায় - রাতে ঘুম না হলে করণীয়
২। গোপনে যেনা করে যদি আল্লাহর কাছে মাফ না চাই তাহলে আল্লাহ সেই ব্যক্তিকে মহামারী দিবেন এবং সেই মহামারীতে এমন রোগে আক্রান্ত করবেন সেই রোগ ভালো করা সম্ভব হবে না। সেই মহামারী রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করবে।
৩। যেই ব্যক্তি গোপনে যেনা করবে মহান আল্লাহ তাকে দুনিয়াতেই এমন একটি রোগে আক্রান্ত করবেন যেই রোগ তার বংশের কারো কখনো হয়নি বা নেই। এভাবেই সেই রোগে আক্রান্ত হয়ে ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যু হবে।
কেউ যদি গোপনে যিনা করে আর মনে করে কেউ দেখেনি তাহলে সেটা ভুল ধারণা দুনিয়ার কেউ না দেখলেও মহান আল্লাহ দেখেন তাই কেউ গোপনে যিনা করলে তাকে দুনিয়াতে এই তিনটি শাস্তি ভোগ করতে হবে যা অনেক কষ্ট দায়ক। তাই আপনারা যেনার মতো জঘন্যতম পাপ কাজ করা থেকে বিরত থাকবেন।
যেনাকারী কি জান্নাতে যাবে: শেষ কথা
প্রিয় বন্ধুরা আজকের পোস্টে আপনাদের জানানো হয়েছে যিনা কাকে বলে যিনা কত প্রকার ও কি কি যেনাকারী কি জান্নাতে যাবে যেনা করলে তা থেকে মাফ পাওয়ার কোন উপায় আছে কিনা যিনা মাফের দোয়া গোপনে যেনা করলে তিনটি বিপদ আসবেই এই সকল বিষয়ে।
আশা করছি আপনারা আর্টিকেলটি পড়ে যেনা করার ভয়াবহতা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন তাই কখনোই কোনো অবস্থাতেই যিনাই লিপ্ত হবেন না। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন আমিন। এরকম আরো তথ্যমূলক আর্টিকেল পেতে আমাদের JONOPRIYO BLOG ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করুন।