টক দই খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা ও টক দই এর ক্ষতিকর দিক
অনেকে ইন্টারনেটে সার্চ করে জানতে চেয়ে থাকেন টক দই খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা ও টক দই এর ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে। তাই আপনাদের জন্য আজকের পোস্টটিতে এই বিষয়ে আলোচনা করা হবে তাই এই সকল বিষয়ে জানতে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
পোস্ট সূচিপত্রঃ টক দই খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা ও টক দই এর ক্ষতিকর দিক
- টক দই খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা
- ওজন কমাতে টক দই এর উপকারিতা
- টক দই খাওয়ার নিয়ম - ওজন কমাতে টক দই খাওয়ার নিয়ম
- মুখে টক দই এর উপকারিতা
- রাতে টক দই খেলে কি হয়
- প্রতিদিন দই খেলে কি হয়
- টক দই এর ক্ষতিকর দিক
- আমাদের শেষ কথা
টক দই খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা
বিভিন্ন রকম পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এই টক দই যার মধ্যে রয়েছে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, প্রোটিন ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন বি ২, ভিটামিন বি ১২ এবং শরীরের জন্য উপকারী ব্যাকটেরিয়া। এই সব কিছু মিলিয়ে টক দই অনেক উপকারী। টক দই খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা জেনে রাখুন।
১. টক দই হাড় ও দাঁত গঠনে উপকারী
টক দইয়ের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম আর হাড় ওর দাঁত মজবুত করার
জন্য ক্যালসিয়াম অনেক উপকারী। দুই কাপ দুইয়ের মধ্যে রয়েছে ২৭৫ মিলিগ্রাম
ক্যালসিয়াম। সেজন্য প্রতিদিন এক কাপ করে টক দই খেলে এটা হাড় এবং দাঁত
মজবুত এবং সুন্দর গঠনের জন্য অনেক উপকারী।
২. টক দই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
শরীরের বিভিন্ন রকম ব্যাকটেরিয়া আক্রমণের কারণে বিভিন্ন রকম রোগ শরীরে বাসা বাঁধে। কিন্তু টক দই খাওয়ার ফলের টক দইয়ের মধ্যে থাকা উপকারী ব্যাকটেরিয়া শরীরের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার সাথে লড়াই করে সেগুলো ধ্বংস করে। এর ফলে টক দই খাওয়ার কারণে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকটা বেড়ে যায়।
৩. টক দই পেটের সমস্যা নিরাময় করে
পেটের বিভিন্ন রকম সমস্যা নিরাময় করার জন্য টক দই অনেক উপকারী। টক দইয়ের মধ্যে
থাকা উপকারী ব্যাকটেরিয়া কোষ্ঠকাঠিন্য, এসিডিটি, ডায়রিয়া এবং বদহজমের মতো
সমস্যাগুলো নিরাময় করে। তাই নিয়মিত টক দই খেলে এ সকল উপকারিতা পাবেন
এছাড়াও টক দই খাওয়ার ফলে আলসারের সমস্যা নিরাময় হয়।
৪. টক দই উচ্চ রক্তচাপ কমাতে উপকারী
যাদের উচ্চ রক্তচাপের মত সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য অনেক উপকারী একটি খাবার হল টক
দই।একটি গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত পরিমাণ মতো টক দই খেলে টক দইয়ের মধ্যে থাকা
প্রোবায়োটিক নামক একটি উপাদান শরীরের ক্ষতিকারক কোলেস্টরেল নিরাময় করে এবং
এতে করে হার্ট ভালো থাকে। তার পাশাপাশি উচ্চ রক্তচাপ কমতে সাহায্য করে।
আরো পড়ুন: মিল্ক শেকের দাম কত ২০২৪ - মিল্ক শেক এর উপকারিতা ও অপকারিতা
৫. টক দই ত্বক ভালো রাখতে উপকারী
ত্বক সুন্দর বা ভালো রাখতে কে না চায়। কিন্তু ত্বক ভালো রাখার অনেক উপায়
রয়েছে তার মধ্যে একটি উপকারী উপায় হলো টক দই খাওয়া। টক দইয়ের মধ্যে
রয়েছে মিনারেল। যা আমাদের চুলের জন্য এবং ত্বকের জন্য অনেক
উপকারী। নিয়মিত পরিমাণ মতো টক দই খেলে চুল এবং ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি
পাবে।
৬. টক দই ওজন কমাতে উপকারী
শরীরের ওজন কমাতে টক দই অনেক উপকারী। টক দই এর মধ্যে রয়েছে আমি সেজন্য টক দই
খেলে মনে হয় পেট ভরে রয়েছে এতে করে অতিরিক্ত ক্ষুধা লাগে না এবং কম খাবার খাবার
ফলে ওজন কমে যায়। তাই আপনার শরীরের ওজন যদি বেশি থাকে এবং সে ওজন যদি কমাতে চান
তাহলে টক দই খেতে পারেন।
৭. টক দই চর্মরোগ প্রতিরোধে উপকারী
টক দইয়ের মধ্যে রয়েছে ল্যাকটিক অ্যাসিড যা শরীরের মৃত কোষ দুর করতে সাহায্য
করে। এবং শরীরের মধ্যে যদি চর্মরোগ থাকে তাহলে চর্মরোগ নিরাময় করে
থাকে। সেজন্য আপনার যদি চর্মরোগ হয় বা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাহলে সেটা
থেকে মুক্তি পেতে টক দই খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন তাহলে অনেক উপকারিতা
পাবেন।
৮. টক দই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে
যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের জন্য টক দই অনেকটা উপকারী। হয়ত অনেকেই মনে
করছেন টক দই তো দুধ এবং হালকা পরিমাণ মিষ্টি জাতীয় উপাদান দিয়ে তৈরি করা
হয়। কিন্তু আপনার ধারণা ভুল যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তারা যদি হালকা পরিমাণ
টক দই খেতে পারে তাহলে এটা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করবে। তবে অতিরিক্ত বেশি
পরিমাণ খাওয়া যাবে না তাহলে আরো বেশি সমস্যা তৈরি হবে।
৯. টক দই শরীরে টক্সিন জমতে দেয় না
শরীরের মধ্যে যখন টক্সিন জমে যায় তখন বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দেয়। যেমন
অন্ত্রনালীর বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দেয় তাই আপনি যদি নিয়মিত পরিমান মত টক দই
খান তাহলে এটা শরীরের টক্সিন জমতে বাধা দিবে এবং অন্ত্রনালী পরিষ্কার থাকবে যা
শরীর সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে এবং বার্ধক্য প্রতিরোধ করবে।
১০. টক দই হার্ট ভালো রাখতে উপকারী
টক দই হার্ট ভালো রাখার জন্য অনেক উপকারী। কেউ যদি নিয়মিত পরিমান মত টক দই খেতে
পারে তাহলে তার হার্ট সুস্থ থাকবে। তাই আপনার হার্ট ভালো রাখতে টক দই
খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন। এছাড়াও টক দই খেলে মানুষের চাপ অনেকটা
কমে। আবার মুখে ঘা হলে সেখানে টক দই লাগালে মুখের ঘা নিরাময়
হয়।
ওজন কমাতে টক দই এর উপকারিতা
ওজন কমাতে টক দই এর উপকারিতা অনেক বেশি যা ইতোমধ্যে আপনাদের বলেছি। আপনার ওজন যদি অনেক বেশি থাকে তাহলে আপনাকে খাবার খাওয়া কমাতে হবে কিন্তু অনেকেই খাবার খাওয়া কমাতে পারে না কারণ একটু পর পর ক্ষুদা লাগে। কিন্তু আপনি যদি টক দই খান তাহলে মনে হবে আপনার পেট ভরে রয়েছে এতে করে আপনারা একটু পর পর ক্ষুধা লাগবে না।
আরো পড়ুন: লটকন ফলের ১৫ টি উপকারিতা - লটকন ফলের অপকারিতা
আর আপনি যদি এভাবে কম খাবার খান তাহলে আপনার শরীরের ওজন তাড়াতাড়ি কমে
যাবে। আর এভাবেই টক দই শরীরের ওজন কমাতে কাজ করে থাকে। তবে মনে রাখবেন
ওজন কমানো যায় বলে নিয়মের বাহিরে এবং অতিরিক্ত বেশি পরিমাণ টক দই খাওয়া যাবে
না। টক দই খাওয়ার নিয়ম মেনে খেতে হবে তাহলে ওজন কমবে ইনশাআল্লাহ।
টক দই খাওয়ার নিয়ম - ওজন কমাতে টক দই খাওয়ার নিয়ম
টক দই শুধু উপকারিতা দেখলেই হবে না আপনাকে জানতে হবে টক দই খাওয়ার
নিয়ম। টক দই খাওয়ার সঠিক নিয়ম বা সঠিক সময় হল দুপুরের খাবার খাওয়ার
পরে। এবং রাতের বেলা টক দই খাওয়া যাবেনা। আর টক দই খাওয়ার
আরেকটি নিয়ম হল শুধুমাত্র খালি টক দই না খেয়ে তার সাথে অন্য কোন উপাদান
যেমন গুড় মধু অথবা হালকা পরিমাণ লবণ দারুচিনি ও গোলমরিচ গুঁড়ো
মিশিয়ে খেতে পারেন তাহলে ভালো উপকারিতা পাবেন এছাড়াও টক দই দিয়ে বোরহানি তৈরি
করে খেতে পারেন।আর প্রতিদিন টক দই খাওয়া যাবেনা এ নিয়ম গুলো মেনে যদি টক দই খান
তাহলে তা শরীরের জন্য উপকারে আসবে।
মুখে টক দই এর উপকারিতা
টক দই ত্বক অর্থাৎমুখের জন্য অনেক উপকারী। মুখের বিভিন্ন রকম সমস্যা দূর করে মুখ
উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে থাকে। মুখে টক দই মাখার কিছু উপকারিতা নিচে দেওয়া
হলো।
- মুখের কালচে দাগ দূর করে
- মুখের জন্য প্রাকৃতিক এক্সফোলিয়েট হিসেবে কাজ করে থাকে টক দই
- মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে
- মুখের চামড়া কুঁচকে যাওয়া ভাব দূর করে মুখের চামড়া টান টান করে।
- মুখের ত্বকে তৈরি হওয়া সানবার্ন কমাতে উপকারী
- মুখে বয়সের ছাপ কমায়
- শীত বা গ্রীষ্ম কালে মুখের আর্দ্রতা ধরে রাখে
- মুখের ত্বক সুন্দর রাখতে প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজারের ভূমিকা পালন করে।
রাতে টক দই খেলে কি হয়
রাতে যেহেতু আমরা খাবার খাওয়ার পরে কোন কাজ করি না সেজন্য আমাদের এই খাবারগুলো হজম হতে অনেকটা সময় লাগে। তাই আপনি যদি রাতের বেলা টক দই খান তাহলে এটা আপনার খাবার হজমের বাধা সৃষ্টি করবে আর খাবার হজম না হলে পেটের সমস্যা তৈরি হবে।
আরো পড়ুন: প্রতিদিন কতটুকু কিসমিস খাওয়া উচিত - কিসমিসের ১৬ টি উপকারিতা
এছাড়াও রাতে টক দই খেলে ঠান্ডা লেগে সর্দি কাশি হতে পারে, বমি হওয়ার
সম্ভাবনা থাকে এছাড়াও রাতের বেলা টক দই খেলে স্থূলতা বৃদ্ধি পেতে পারে তাই বলা
যায় রাতের বেলা টক দই খাওয়া মোটেও ঠিক নাই। তারপরও কারো যদি রাতের বেলা টক
দই খাওয়ার পরে কোন সমস্যা দেখা না দেই তাহলে তারা রাতের বেলা টক দই খেতে পারবে
তবে যাদের অল্পতেই ঠান্ডা লেগে যাওয়া সমস্যা রয়েছে তাদের রাতের বেলা টক দই না
খাওয়াই ভালো।
প্রতিদিন দই খেলে কি হয়
প্রতিদিন পরিমাণ মতো দই খেলে এটা শরীরের জন্য অনেক উপকারী। যেমন প্রতিদিন দই খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময় করে বদহজম নিরাময় করে এছাড়াও যাদের ওজন বেশি রয়েছে তাদের ওজন কমায় হার্ট ভালো রাখে উচ্চ রক্তচাপ কমায়। তবে যাদের অল্পতেই ঠান্ডা লেগে যায় তাদের প্রতিদিন দই না খাওয়া উচিত।
আর সরাসরি ফ্রিজের মধ্যে থেকে দই বের করে সাথে সাথে খাওয়া যাবে
না। প্রতিদিন দই খেয়ে উপকারিতা পেতে চাইলে হালকা পরিমাণ করে খেতে
হবে। তাহলেই প্রতিদিন দই খেলে ভালো উপকারিতা পাওয়া যাবে। আর প্রতিদিন
যদি বেশি পরিমাণ করে দই ওজন বেড়ে যাওয়া সহ বিভিন্ন রকম সমস্যা সৃষ্টি হতে
পারে।
টক দই এর ক্ষতিকর দিক
টক দইয়ের উপকারিতা অনেক বেশি ক্ষতিকর দিক বা অপকারিতা তেমন একটা নেই তারপরেও নিয়ম না মেনে খাওয়ার ফলে বিভিন্ন রকম সমস্যা তৈরি হতে পারে। তার পরেও যে জিনিসের উপকারিতা রয়েছে সে জিনিসের উপকারিতা ও রয়েছে তাই টক দই এর ক্ষতিকর দিক গুলো হলো।
টক দই এর ক্ষতিকর দিক বা অপকারিতা
-
রাতের বেলা টক দই খেলে হজমের সমস্যা হতে পারে এতে করে পেটের সমস্যা দেখা দিতে
পারে
-
ফ্রিজের মধ্যে থেকে ঠান্ডা টক দই বের করে সাথে সাথে খাওয়ার ফলে সর্দি-কাশি
হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
-
টক দইয়ের সাথে চিনি মিশিয়ে খেলে ওজন বেড়ে যেতে পারে।
-
টক দই গরম করে খাওয়া যাবে না এতে করে বিভিন্ন রকম সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
-
যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের প্রতিদিন টক দই খাওয়া যাবেনা। অথবা বেশি
পরিমাণ খাওয়া যাবে না তাহলে ডায়াবেটিস বেড়ে যেতে পারে।
-
রাতের বেলা টক দই খেলে স্থূলতা বেড়ে যেতে পারে। এতে করে অস্থির লাগবে এবং ঘুম
না হতেও পারে।
আমাদের শেষ কথা
প্রিয় বন্ধুরা আজকের আর্টিকেল থেকে আপনারা জানতে পারলেন টক দই খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা ও টক দই এর ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে। আশা করছি সকল বিষয়ে জানতে পেরে আপনারা কিছুটা হলে উপকৃত হয়েছেন। তাই আমাদের আজকের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে জানাতে পারেন।
এবং আপনার যদি এই বিষয়ে আরো কিছু জানার থাকে তাহলে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদের জানিয়ে দিতে পারেন। এরকম আরো বিভিন্ন রকম বিষয় জানতে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ফলো করুন। ধন্যবাদ।