দুরুদ শরীফ - দুরুদ শরীফ বাংলা উচ্চারণ - ছোট দুরুদ শরীফ সমূহ
আপনি যদি এই দরুদ শরীফগুলো শিখতে পারেন তাহলে এটা আপনার অনেক বেশি উপকারে আসবে। তাই দুরুদ শরীফ বাংলা উচ্চারণ জানতে চাইলে বা শিখতে চাইলে নিজের অংশগুলো মনোযোগ সহকারে পড়তে শুরু করুন।
পোস্ট সূচিপত্রঃ দুরুদ শরীফ - দুরুদ শরীফ বাংলা উচ্চারণ - ছোট দুরুদ শরীফ সমূহ
- দুরুদ শরীফ - দুরুদ শরীফ বাংলা উচ্চারণ
- ছোট দুরুদ শরীফ সমূহ
- দরুদ শরীফ পড়ার নিয়ম
- দরুদ পড়ার নিষিদ্ধ সময়
- দুরুদ শরীফের ফজিলত ও ঘটনা
- আমাদের শেষ কথা
দুরুদ শরীফ - দুরুদ শরীফ বাংলা উচ্চারণ
দুরুদ শরীফ হলো সালাত এবং সালাত শব্দের অর্থ হলো শুভকামনা। সালাতের ভেতর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এর উপর রহমত প্রার্থনা করে দরুদ শরীফ পাঠ করা হয়ে থাকে। এই দুরুদ শরীফ ছোট থেকে বড় পর্যন্ত রয়েছে। প্রথমে বড় দুরুদ শরীফ বাংলা উচ্চারণ সহ জেনে নিন।
দরুদ শরীফ আরবিঃ اللهمّ صلّي على محمد وعلى علي محمدين، كما صلّيت على إبراهيم وعلى علي إبراهيم إنّا حميدوم ماجد. اللهمّا بارك على محمد وعلى علي محمد، كاما بركة على إبراهيم، وعلى علي إبراهيم، إناكا حميدوم ماجد.
দুরুদ শরীফ বাংলা উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিউ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন, কামা সাল্লাইতা আলা ইবরাহিমা ওয়া আলা আলি ইবরাহীমা ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিউ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিম, কামা বারাকতা আলা ইবরাহীমা, ওয়া আলা আলি ইবরাহীমা, ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ।
আরো পড়ুনঃ বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম ও দোয়া - বেতের নামাজের নিয়ত
দুরুদ শরীফ বাংলা অর্থঃ হে আল্লাহ তুমি মুহাম্মদ (সাঃ) এবং তার সকল বংশধরদের ওপর তোমার রহমত বর্ষণ/ নাযিল করো।যেমন রহমত নাযিল করেছিলেন হয়রত ইব্রাহিম (আঃ) ও তার বংশধর এর ওপর। তুনি নিশ্চয় অনেক মর্যাদাবান ও প্রসংসনীয়। হে আল্লাহ মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তার বংশধরের উপর সেইরূপ বরকত অনুগ্রহ করো যেইরকম বরকত অনুগ্রহ ইব্রাহিম (আঃ) ও তার বংশধরদের ওপর করেছিলে। নিশ্চয় তুমি অধিক মর্যাদাবান ও প্রশংসনীয়। ( হাদীস নং ২৯৭০ সহীহ বুখারী)
ছোট দুরুদ শরীফ সমূহ
বড় বড় শরীফের পাশাপাশি ছোট দরুদ শরীফ রয়েছে। তবে বড় দরুদ শরীফ সালাতের তাশাহুদ এ এরপরে পড়তে হয় নয়তো নামাজ সম্পন্ন হয় না। কিন্তু ছোট দরুদ শরীফ সালাতে পড়তে হয় না বা পড়া যায় না। তুমি সারাদিন অন্যান্য কাজে ছোট দরুদ শরীফগুলো পড়া যায়। ৪ টি ছোট দরুদ শরীফ রয়েছে সেগুলো হলোঃ
১. ছোট দরুদ শরীফ আরবিঃ اللهم صل على محمدين نبيل امي وعلى علي محمدين قم سلايتة على ابراهيم وعلى ابراهيم اناكا حميدوم ماجد
ছোট দুরুদ শরীফ বাংলা উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা সল্লি আলা মুহাম্মাদিনিন নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা সল্লাইতা আলা ইবরাহীমা ওয়া আলা আলি ইবরাহীম ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।
বাংলা অর্থঃ হে আল্লাহ তুমি মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার পরিবার বা পরিজনদের ওপর সেইরূপ ভালো রহমত বর্ষণ করুন। যেভাবে ইব্রাহিম ও তার পরিবার পরিজনদের উপর করেছিলে। নিশ্চয় তুমি প্রসংসনীয় ও মর্যাদাবান।
২. ছোট দরুদ শরীফ আরবিঃ اللهمّ صلّي وسلم على نبيينا محمد
ছোট দরুদ শরীফ বাংলা উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা সল্লি ওয়া সাল্লিম আলা নাবিয়্যিনা মুহাম্মাদ
বাংলা অর্থঃ হে আল্লাহ তুমি আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) এর সালাম ও সালাত বর্ষণ করুন।
৩. ছোট দরুদ শরীফ আরবিঃ اللهمّ صلّي على محمد وعلى علي محمد
ছোট দরুদ শরীফ বাংলা উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা সল্লি আলা মুহাম্মাদিউ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ।
বাংলা অর্থঃ হে মহান আল্লাহ আপনি রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এবং তার পরিবার পরিজনদের ওপর আপনার রহমত বর্ষণ করুন।
৪. ছোট দরুদ শরীফ আরবিঃ صلى الله عليه وسلم
ছোট দরুদ শরীফ বাংলা উচ্চারণঃ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
বাংলা অর্থঃ আল্লাহ মুহাম্মদ এর উপর দয়া ও শান্তি বর্ষিত করুন।
এটা হলো সবচেয়ে ছোট দরুদ শরীফ।
দরুদ শরীফ পড়ার নিয়ম
দুরুদ শরীফ পড়ার নিয়ম হলো খুব ধীরস্থির ভাবে এবং আন্তরিকতার সাথে পড়তে
হবে। দুরুদ শরীফ পাঠ করার সময় জোরে আওয়াজ করা যাবে না অধিক নড়াচড়া করা
যাবে না জোরে জোরে মাথা নাড়ানো যাবে না। একই বৈঠকে রাসুলুল্লা (সাঃ) নাম
একাধিকবার শুনলেও প্রথমবার প্রত্যেকবারের জন্য দরুদ শরীফ পাঠ করা
উত্তম। এভাবেই দরুদ শরীফ পাঠ করতে হয় এছাড়া কোন সময়গুলোতে দরুদ শরীফ
পড়তে পারবেন সেগুলো হলোঃ
- দুই রাকাত নামাজ হলে দ্বিতীয় রাকাতে দরুদ শরীফ পড়তে হবে। চারা রাকাত নামাজ হলে চতুর্থ রাকাতে দরুদ শরীফ পড়তে হবে।
- কোনো মজলিস থেকে বা কোনো বৈঠক থেকে উঠার সময় বা আগে দরুদ শরীফ পড়তে হবে।
- বিশ্ব নবী হযরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নাম শুনলে বা নিজে উচ্চারণ করলে দরুদ শরীফ পড়তে হবে।
- কোনো কিছু নিয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া প্রার্থনা করার আগে দরুদ শরীফ পাঠ করতে হয়।
- মসজিদে প্রবেশ করার সময় এবং মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় দরুদ শরীফ পড়তে হবে।
- কোনো বই বা কোনো কিছু লেখার শুরুতে দরুদ শরীফ পাঠ করা উত্তম।
- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম এর রওজা মোবারক জিয়ারত করার সময় দরুদ শরীফ পড়তে হয়।
- যেকোনো বিপদ আপদে পড়লে বা কোনরকম ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে সেই সময় দরুদ শরীফ পড়তে পারেন।
আরো পড়ুনঃ ফি আমানিল্লাহ কখন বলতে হয় - ফি আমানিল্লাহ উত্তরে কি বলতে হয়
এই সময়গুলোতে দরুদ শরীফ পড়া উত্তম বা উচিত।তবে আপনি যদি পাক পবিত্র থাকেন তাহলে যেকোনো সময় দুরুদ শরীফ যেকোনো অবস্থায় পড়লেও সওয়াব পাবেন।
দরুদ পড়ার নিষিদ্ধ সময়
কেউ যদি পাক পবিত্র থাকে তাহলে দুরুদ শরীফ পড়তে পারবে এবং নামাজের মধ্যে দুরুদ শরীফ পড়া হয়ে থাকে কিন্তু দরুদ পড়ার নিষিদ্ধ কিছু সময় রয়েছে এগুলো নিষিদ্ধ সময়ে দুরুদ শরীফ পড়া যাবে না। এ নিষিদ্ধ সময় গুলোতে যদি আপনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নাম শুনলেও দুরুদ পড়া যাবে না। দরুদ পড়ার নিষিদ্ধ সময় গুলো হলোঃ
- প্রসাব পায়খানা করার সময় দরুদ পড়া নিষিদ্ধ
- সহবাস করার সময় দরুদ পড়া নিষিদ্ধ
- হাঁচি কাশির সময় দরুদ পড়া নিষিদ্ধ
- প্রাণী জবেহ করার সময় দরুদ পাঠ করা নিষিদ্ধ
- কোরআন শরীফ তেলাওয়াত করার সময় রাসুলুল্লাহ সাঃ এর নাম এলেও দরুদ পড়া যাবেনা।
এবার হয়তো আপনার মনের মধ্যে প্রশ্ন জেগেছে এই সময়গুলোতে কেন দরুদ পাঠ করা যাবেনা। তাহলে জেনে রাখুন কেউ যদি প্রথম তিন অবস্থায় দরুদ পড়ে তাহলে দরুদকে অপমান করা হয়। আর চতুর্থ অবস্থায় অর্থ্যাৎ পশু জবাই এর সময় দরুদ পড়লে সেটা শিরক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাই সেই সময় দরুদ পড়া নিষিদ্ধ। পঞ্চম অবস্থায় অর্থ্যাৎ কোরআন শরিফ পড়ার সময় রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর নাম এলেও দরুদ পড়া যাবেনা এর হলো কারণ হলো সেই সময় দরুদ পড়লে কোরআন তেলাওয়াতের অপমান করা হয়। সেইজন্য এই ৫ সময়ে দরুদ পড়া নিষিদ্ধ।
দুরুদ শরীফের ফজিলত ও ঘটনা
যে ব্যক্তির রাসূলুল্লাহ সাঃ এর উপর একবার দুরুদ শরীফ পাঠ করবে আল্লাহ সেই ব্যক্তির উপর ১০ বার রহমত বর্ষণ করবে এবং সেই ব্যক্তির দশটি গুনাহ সাথে সাথে মাফ করা হবে। এছাড়া দুরুদ শরীফ পাঠ করার আরও ফজিলত হলো কোন ব্যক্তি যদি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করে তাহলে কিয়ামতের দিন সেই ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সঙ্গী হয়ে তাহার সবচেয়ে নিকটে থাকবে।
আরো পড়ুনঃ দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির ইসলামিক উপায় - দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির দোয়া
যে ব্যক্তি রাসুলুল্লাহর নামে বেশি বেশি দরুদ পাঠ করবে সেই ব্যক্তির জন্য
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিয়ামতের দিন সুপারিশ
করবেন। মহান আল্লাহ এবং ফেরেশতারা রাসূলুল্লাহ এর উপর রহমত নাযিল করে
থাকেন সেজন্য মুমিন বান্দা হিসেবে আমাদেরও উচিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর বেশি বেশি দুরুদ পাঠ করা।
দরুদ শরীফ পাঠ করা সম্পর্কে একটি ঘটনা হলোঃ
ওবায়দুল্লাহ বিন ওমর কাওয়ারি একদিন একটি ঘটনা বর্ণনা করেন তিনি এভাবে বলেন একদিন আমার একজন প্রতিবেশী মৃত্যুবরণ করলেন এবং সেই প্রতিবেশী মৃত্যুবরণ করার পরে তাকে আমি একদিন স্বপ্নে দেখলাম এবং স্বপ্নে তাকে আমি জিজ্ঞেস করলাম আল্লাহ মৃত্যুর পরে আপনার সাথে কিরূপ আচরণ করলেন।
তখন তিনি উত্তরে বললেন আল্লাহ তায়ালা আমাকে মাফ করে দিয়েছেন তখন আমি তাকে কারণ জিজ্ঞাসা করলাম এবং তিনি উত্তর দিলেন যখন আমি কোন কিতাব লিখতাম এবং এ সময় রাসুলুল্লাহ এর নাম আসতো তখনই আমি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লিখতাম। এটা লেখা আমার একটা অভ্যাস হয়ে গেছিল।
এই কারণে আল্লাহ আমাকে এমন নিয়ামত দান করেছেন যে নিয়ামত কখনো কোন চোখ দেখেনি
এবং কোন কান শোনেনি এবং কোন অন্তর কল্পনাও করতে পারেনি। এভাবে আল্লাহ
আমাকে মাফ করে দিয়েছেন। তাহলে আশা করছি বুঝতে পারলেন দরুদ শরীফের কত
নিয়ামত ফজিলত রয়েছে।
আমাদের শেষ কথা
প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনেরা আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদের জানানোর চেষ্টা করেছি দুরুদ শরীফ দুরুদ শরীফ বাংলা উচ্চারণ ছোট দুরুদ শরীফ সমূহ দরুদ শরীফ পড়ার নিয়ম দরুদ পড়ার নিষিদ্ধ সময় এবং দুরুদ শরীফের ফজিলত ও ঘটনা সম্পর্কে।
আশা করছি এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনারা এই সকল বিষয়ে ভালোভাবে জানতে পেরে গেছেন তার পরেও যদি এ বিষয়ে আপনাদের কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে পারেন।এবং এরকম আরো বিভিন্ন বিষয় জানতে আমাদের JONOPRIYO BLOG ওয়েবসাইট নিয়মিত ফলো করতে পারেন।