কিডনির সমস্যা হলে কোথায় কোথায় ব্যথা হয় জেনে নিন
অনেক সময় কিডনিতে পাথর হতে পারে অথবা মূত্রনালীতে সমস্যা হওয়ার কারণে বিভিন্ন জায়গায় ব্যথা অনুভব হয়। আপনারা যারা জানতে চান কিডনির সমস্যা হলে কোথায় কোথায় ব্যথা হয় তারা নিচের অংশ থেকে এ বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নিন।
সূচিপত্রঃ কিডনির সমস্যা হলে কোথায় কোথায় ব্যথা হয় জেনে নিন
- কিডনির সমস্যা হলে কোথায় কোথায় ব্যথা হয়
- কিডনি ড্যামেজের লক্ষণ
- সুস্থ কিডনির লক্ষণ
- কিডনি ব্যথা দূর করার উপায়
- কিডনি সমস্যা বোঝার উপায়
- কিডনি ব্যথা বোঝার উপায়
- কিডনির সমস্যা হলে কি খাওয়া উচিত
- কিডনি ব্যথা দূর করার ঔষধ
- কিডনি কোথায় থাকে তার ছবি
- কিডনির সমস্যা হলে কোথায় কোথায় ব্যথা হয়ঃ শেষ কথা
কিডনির সমস্যা হলে কোথায় কোথায় ব্যথা হয়
কিডনির সমস্যা শুধুমাত্র ব্যথা দিয়ে বোঝা যায় না তার পরেও কিডনির সমস্যা হলে বেশ কয়েকটি জায়গায় ব্যথা অনুভব হয় যেমন বিশেষ করে পিঠের নিচের দিকে বেশি ব্যথা হয়ে থাকে এবং দুই পাঁজরে ব্যথা হয়ে থাকে অনেক সময় পাঁজরের এক সাইডে ব্যথা হয়ে থাকে।
আরো পড়ুনঃ সারা শরীর ব্যথা করে কেন ও কি খেলে শরীরের ব্যথা কমে
অর্থাৎ সহজ ভাবে বলতে গেলে কিডনির সমস্যা হলে পাঁজরের দুই পাশে অথবা মেরুদন্ডের
নিচের দিকে সামনে অথবা পিছনে ব্যথা হয়ে থাকে। যদি এরকম সমস্যা আপনার বেশ
কিছুদিন ধরে থাকে তাহলে চিকিৎসকের সাথে কথা বলা প্রয়োজন। তারপর পরীক্ষা
করার মাধ্যমে যদি কোন সমস্যা দেখা দেয় তাহলে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া
প্রয়োজন।
কিডনি ড্যামেজের লক্ষণ
যখন কিডনি ড্যামেজ হতে থাকে তখনই বিভিন্ন রকম শারীরিক লক্ষণ দেখা দেয়। হয়তো কিডনি ড্যামেজের লক্ষণ না জানার কারণে তেমন একটা গুরুত্ব দেই না এতে করে কিডনি যখন পুরোপুরি ড্যামেজ হয়ে যায় তখন অনেক বড় সমস্যা হয়ে যায় তাই কিডনি ড্যামেজের লক্ষণ জেনে রাখা ভালো।
- প্রসাবের সমস্যা হওয়া যেমন প্রসাবের অতিরিক্ত বাজে দুর্গন্ধ হওয়া, প্রসাবে জ্বালাপোড়া করা, প্রসাবের সময় ব্যথা হওয়া এবং অনেক সময় প্রসাবের সাথে রক্ত বের হওয়া।
-
শরীর সারাক্ষণ ক্লান্ত অনুভব হবে যেমন কোন কাজ করার সময় অতিরিক্ত ক্লান্ত
লাগবে।
-
যখন কিডনি ড্যামেজ হতে থাকে তখন ঘুমের সমস্যা হয়ে থাকে অর্থাৎ ঠিক ঠাক ঘুম হয়
না।
-
যে কোন খাবারের রুচি কমে যাবে ক্ষুধা থাকলেও খাবার খেতে ইচ্ছে করবে না। অনেক
সময় বমি বমি ভাব হবে।
-
গরম পরিবেশে থাকার পরেও শরীরের ঠান্ডা অনুভব হবে।
-
কিডনি ড্যামেজ এর আরেকটি লক্ষণ হল শরীরের বিভিন্ন স্থানে চুলকানি হওয়া।
-
হাত পায়ের পাতা বা গোড়ালি ফুলে যাওয়া অথবা পানি জমা।
-
মনোযোগ কমে যাওয়া যদি কিডনি ড্যামেজ হতে থাকে তাহলে যে কোন কাজে মনোযোগ কমে
যাবে।
এগুলোই মূলত কিডনি ড্যামেজের লক্ষণ এছাড়াও আরো বেশ কিছু লক্ষণ থাকতে পারে তবে
এগুলো লক্ষণ যদি আপনার মধ্যে বেশ কিছুদিন ধরে দেখতে পান তাহলে অবহেলা না করে
চিকিৎসকের কাছে যাবেন এবং আপনার সমস্যার কথাগুলো খুলে বলবেন।
সুস্থ কিডনির লক্ষণ
আমাদের শরীরের দূষিত পদার্থ ছেঁকে বের করে দেওয়ার কাজ করে থাকে কিডনি। যখন
কিডনির সমস্যা হয় তখন সেগুলো ঠিকঠাক মতো কাজ করে না এতে করে বিভিন্ন লক্ষণ দেখা
দেয় আর সেগুলো লক্ষণ দেখলে বোঝা যায় যে কিডনি সুস্থ রয়েছে কিনা।
কিডনির কাজ যেহেতু শরীরের দূষিত পদার্থ গুলো বের করে দেওয়া সেজন্য যদি কিডনি সুস্থ থাকে তাহলে শরীরের দূষিত পদার্থ গুলো ঠিকমতো বের করে দিতে পারবে এতে করে শরীরের বিভিন্ন সমস্যা হয় যেমন প্রসাবের সমস্যা, ঘুমের সমস্যা, মনোযোগ কমে যাওয়া এবং শরীর সারাক্ষণ অতিরিক্ত ক্লান্ত না লাগা এগুলো যদি ঠিকঠাক থাকে তাহলে বুঝতে হবে যে আপনার কিডনি সুস্থ রয়েছে। এবং আপনার খাওয়ার রুচি যদি ঠিক থাকে তাহলে এটা কিডনি সুস্থ থাকার লক্ষণ।
কিডনি ব্যথা দূর করার উপায়
কিডনির ব্যথা দূর করার জন্য কিছু উপায় অবলম্বন করতে পারেন তবে এগুলো যে
শুধুমাত্র আপনার কিডনির ব্যথা দূর করে দেবে এরকম ভেবে বসে থাকবেন না অবশ্যই
চিকিৎসকের কাছে যাবেন। তার পাশাপাশি কিডনি ব্যথা দূর করার কিছু উপায় মেনে
চলবেন।
১। কিডনি ভালো রাখতে পানি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এবং উপকারী তাই কিডনির সমস্যা হলে কিডনি ব্যথা দূর করতে বেশি বেশি পানি পান করবেন। একজন সুস্থ মানুষের প্রতিদিন ২ থেকে ৩ লিটার পানি পান করা প্রয়োজন আর যাদের কিডনিতে সমস্যা রয়েছে তাদের কিডনির সমস্যা দূর করতে পানি পান করবেন। যদি কিডনিতে পাথর হয়ে থাকে তাহলে সেটা প্রসাবের সাথে বের হয়ে যাবে।
২। ব্যথার স্থানে হালকা পরিমাণ গরম ছেঁক দিতে পারেন এতে করে রক্ত সঞ্চালন ভালোভাবে হবে ফলে ব্যথা কিছুটা হলেও কমবে। তবে সাবধানে অতিরিক্ত বেশি গরম দিয়ে ছেঁক দিতে যাবেন না।
আরো পড়ুনঃ মানুষের কিডনির দাম কত - কিডনি বিক্রি হাসপাতাল বাংলাদেশ
৩। কিডনির ব্যথা হলে একটু বেশি বেশি বিশ্রাম নেওয়ার চেষ্টা করবেন কারণ আপনার যখন কিডনিতে সমস্যা থাকবে তখন অতিরিক্ত হাটাহাটি এবং কাজ করার ফলে সেখানে আরো বেশি চাপ পড়বে এবং ব্যথা হবে তাই ব্যথা কমাতে বিশ্রাম নিতে হবে।
৪। আমরা সবাই জানি ভিটামিন সি আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী কিন্তু যাদের কিডনিতে সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য ভিটামিন সি ক্ষতিকর। অতিরিক্ত ভিটামিন সি খাওয়ার ফলে কিডনির সমস্যা হয়ে থাকে যেমন পাথর হতে পারে এতে করে ব্যথা হয়ে থাকে তাই কিডনি রোগীরা ভিটামিন সি কম খাবেন।
৫। অনেক সময় প্রসাবের ইনফেকশনের কারণে কিডনিতে সমস্যা হয়ে থাকে তাই প্রসাবের সমস্যার কারণে যদি কিডনিতে ব্যথা হয় তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এন্টিবায়োটিক নিতে পারেন। তবে এর পাশাপাশি বেশি বেশি পানি পান করতে হবে।
কিডনি সমস্যা বোঝার উপায়
কিডনি আমাদেরকে সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য কাজ করে থাকে কিন্তু যখন কিডনিতে সমস্যা দেখা দেয় তখন আমাদের শরীরের সবকিছু ঠিকমতো কাজ করে না। এতে করে অনেক অস্বস্তি লাগে কিডনি সমস্যা বোঝার উপায় হল যদি আপনার কিডনিতে সমস্যা হয় তাহলে সব সময় আপনার শরীর ক্লান্তি অনুভব হবে এবং যে কোন কাজ করতে গেলে ভালো লাগবে না।
এবং কোমরের একপাশে অথবা দুই পাশে ব্যাথা হতে থাকবে, কিডনির সমস্যা হলে খাবার রুটি কমে যাবে এতে করে কোন খাবার খেতে ভালো লাগবে না। প্রসাব করার সময় বিভিন্ন রকম সমস্যা হবে যেমন জ্বালাপোড়া করা, রক্ত বের হওয়া, দুর্গন্ধযুক্ত প্রসাব হওয়া, এছাড়াও প্রসাবের সময় অতিরিক্ত ব্যথা করা।
কিডনিতে সমস্যা হলে বমি বমি ভাব বা বমি হবে এগুলোই হল কিডনি সমস্যা বোঝার উপায়। এ ছাড়াও চিকিৎসকের কাছে গেলে পরীক্ষা করার মাধ্যমে কিডনির সমস্যা বোঝা যাবে। তাই উল্লেখিত লক্ষণগুলো যদি দেখতে পান তাহলে চিকিৎসকের কাছে গিয়ে কিডনি পরীক্ষা করাবেন।
কিডনি ব্যথা বোঝার উপায়
কিডনির সমস্যা হলে শরীরের সব জায়গায় ব্যাথা করে না বেশ কয়েকটি জায়গায় ব্যথা করে আর এগুলো জায়গায় যদি ব্যথা বুঝতে পারেন তাহলে সেটা হতে পারে কিডনির ব্যথা। কিডনির ব্যথা বোঝার উপায় হলো না কোমরের দুই পাশে যদি ব্যথা করে এবং তলপেটে ও মেরুদন্ডের নিচের দিকে ব্যথা করে তাহলে বুঝতে হবে যে এটা কিডনি সমস্যা জনিত ব্যথা।
তবে ব্যথাটি যদি কিছু সময়ের জন্য হয়ে ভালো হয়ে যায় তাহলে সেটা কিডনির ব্যথা
না হতে পারে কিন্তু এই একই ভাবে বেশ কিছুদিন ধরে যদি ব্যথা হতে থাকে তাহলে সেটা
কিডনির ব্যথা হতে পারে। তাই নিশ্চিত হওয়ার জন্য কিডনি টেস্ট করাতে
পারেন।
কিডনির সমস্যা হলে কি খাওয়া উচিত
কিডনির সমস্যা হলে খাবার তালিকায় বেশ কিছু খাবার রাখা প্রয়োজন এবং সেগুলো খাবার
নিয়মিত খাওয়া প্রয়োজন। এতে করে কিডনির সমস্যা কিছুটা হলেও কম হতে
পারে। কিডনির সমস্যা হলে যেগুলো খাবার খাবেন।
রসুনঃ কিডনির সমস্যা হলে রসুন খেতে পারেন এটা কিডনি সমস্যা ভালো করতে অনেক ভাল কাজ করে থাকে কারণ রসুনের মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ম্যাগনেসিয়াম ভিটামিন বি ৬ এবং ভিটামিন সি যা কিডনি সমস্যা দূর করতে উপকারী।
ডিমের সাদা অংশঃ ডিমের সাদা অংশ খেলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ থাকে
এতে রয়েছে পটাশিয়াম, সোডিয়াম এবং ফসফরাস তাই নিয়মিত ডিমের সাদা অংশ খেলে
কিডনি ভালো থাকে এবং কিডনির সমস্যা দূর হয়।
পেঁয়াজঃ পেঁয়াজের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন রকম পুষ্টি উপাদান
যেমন ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি তাই খাবার
তালিকা যদি পেঁয়াজ রাখেন এবং সেগুলো খান তাহলে কিডনির সমস্যা দূর হবে।
আরো পড়ুনঃ শসা খাওয়ার ১৫ টি উপকারিতা - শসা খাওয়ার অপকারিতা
সামুদ্রিক মাছঃ সামুদ্রিক মাছের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ওমেগা
থ্রি ফ্যাটি এসিড যা কিডনি ভালো রাখতে অনেক কার্যকরী। তাই এগুলো সামুদ্রিক
মাছ বেশি বেশি খাবেন তাহলে কিডনির সমস্যা থাকলে দূর হয়ে যাবে।
বাঁধাকপিঃ কিডনির সমস্যা দূর করতে বাঁধাকপি অনেক উপকারী কারণ এর
মধ্যে রয়েছে ভিটামিন বি, ভিটামিন সি এবং ভিটামিন কে যা কিডনি রোগের সমস্যা
থেকে তাড়াতাড়ি মুক্ত করে। তাই কিডনির সমস্যা হলে বাঁধাকপি খাবেন।
অলিভ অয়েলঃ কিডনির সমস্যা দূর করতে অলিভ অয়েল অনেক উপকারী এবং
কার্যকরী। তাই আপনার যদি কিডনির সমস্যা থাকে তাহলে অলিভ অয়েল খেতে পারেন
তাহলে খুব তাড়াতাড়ি কিডনির সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
আনারসঃ
কিডনির সমস্যায় আনারস অনেক উপকারী। আনারসের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন
সি, ফাইবার এবং ম্যাগনেসিয়াম তাই নিয়মিত পরিমাণমতো আনারস খেতে পারলে
কিডনির সমস্যা দূর হয়ে যায়। তবে অতিরিক্ত বেশি খাওয়া যাবে না।
কিডনি ব্যথা দূর করার ঔষধ
কিডনি ব্যথা বা কিডনির সমস্যা দূর করার জন্য আপনার কিডনির সমস্যা অনুযায়ী ঔষধ সেবন করা প্রয়োজন সেজন্য প্রথমে চিকিৎসকের কাছে গিয়ে কিডনির অবস্থা বুঝতে হবে তারপরে সেই অনুযায়ী ঔষধ সেবন করতে হবে। তারপরেও আপনারা যেহেতু কিডনি ব্যথা দূর করার ঔষধ এর নাম জানতে চেয়েছেন সেজন্য বেশ কয়েকটি হোমিওপ্যাথি কিডনি ব্যথা দূর করার ঔষধের নাম বলা হলো।
- Apis Mellifica
- Aurum Muriaticum
- Conavalleria
- Arsenicum
- Belladona
- Sujarno
- Cantharis
- Alculi
- Majun Kundur
কিডনি সমস্যায় এই হোমিও ঔষধ গুলো বেশ কার্যকরী। তবে এগুলো ঔষধ এর পার্শ্ব
প্রতিক্রিয়া থাকতে পারে তাই কখনো চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এগুলো ঔষধ সেবন করবেন
না। আপনার কিডনির সমস্যা অনুযায়ী চিকিৎসক যে ঔষধ দিবে সেই ঔষধ সেবন
করবেন।
কিডনি কোথায় থাকে তার ছবি
আপনি কি দেখতে চাচ্ছেন? কিডনি কোথায় থাকে তার ছবি অনেকে দেখতে যেয়ে থাকেন তাই আপনাদের জন্য এই অংশে একটি পিকচার দেওয়া হলো দেখে নিন শরীরের মধ্যে ঠিক নেই কোন অংশে থাকে।
কিডনির সমস্যা হলে কোথায় কোথায় ব্যথা হয়ঃ শেষ কথা
কিডনির সমস্যা হলে কোথায় কোথায় ব্যথা হয় এবং কিডনি ব্যথা দূর করার উপায় সম্পর্কে আশা করছি আপনারা জানতে পেরেছেন। তো আপনার যদি এরকম কোন সমস্যা বুঝতে পারেন তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যাবেন এবং সঠিক চিকিৎসা নিলে ভালো হয়ে যাবে।
আর আমাদের আর্টিকেলটি পড়ার পরে এই বিষয়ে যদি আপনাদের আরো কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারেন। সবাই সুস্থ থাকবেন ভালো থাকবেন ভালো থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।